saudia.noha
টাইম ট্রিলজির এই প্রথম বইতে অনেক অনেক ঐতিহাসিক চরিত্রের সাথে আমাদের সাক্ষাৎ হয়। তবে এতোগুলো চরিত্রের মধ্যে বিদ্যাসাগরের কথা যতবারই এসেছে, পড়ার আগ্রহ ততো বেড়েছে আমার। আজকের রিভিউতে দুই বাংলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ সন্তান, পন্ডিত, বুদ্ধিজীবী ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের কাহিনী সম্পর্কে সামান্য কিছু লিখবো।
আমরা পাঠ্য বইতে পড়েছি বিদ্যাসাগর ১৮৫১ সালে বিধবা বিবাহ প্রথা চালু করেন। শুধু তাই নয় তিনি নিজে উপস্থিত থেকে ৫০ টার বেশি বিবাহ সম্পন্ন করেন। বিধবাবিবাহের সাথে সাথে তিনি নারী শিক্ষার জন্যও অনেক পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। তিনি বেথুন সাহেবের সাথে অনেকগুলো স্কুল প্রতিষ্ঠা করে। সরকারের পক্ষ থেকে প্রথম প্রথম উৎসাহ পেলেও পরবর্তীতে সরকার তাকে বলে, এতো খরচ দেবে কে?
এ কথা বুঝতে আর বাকি রইল না ইংরেজ সরকার এ দেশে শিক্ষা প্রসার চায়, তবে তা কিছু নিম্নশ্রেণীর কেরানী আর সরকারি কর্মচারী সৃষ্টির জন্য। মেয়েমানুষকে শিক্ষা দিয়ে সরকারের কোন লাভ নেই। তারা তো আর বাড়ির বাইরে কাজ করতে আসবে না।
তবুও তিনি যেমন দৃঢ় সংকল্প তেমনই গোঁয়ার, মেয়েদের শিক্ষার কাজ চালিয়ে যেতেই হবে।
তারপর আমরা দেখি, বিদ্যাসাগরের বন্ধু প্যারীচরণ ইংরেজিতে পন্ডিত। একবার তিনি শিশুদের ইংরেজি শিক্ষার জন্য ‘ফার্স্ট বুক’ নামে বই লিখেছিলেন। কথায় কথায় তিনি বিদ্যাসাগরকেও একটি বই লিখতে বলে।বিদ্যাসাগর প্রথমে কোন উত্তর দেননি।
প্যারীচরণ আবার বলেছিলেন, “তুমি কি ভাবছো? তোমার মত এত বড় পন্ডিত অ-আ-ক-খ বই লিখলে তোমার মান যাবে? কিন্তু শিশুকালে যদি শিক্ষার ভিত্তি পোক্ত না হয়, তাহলে বড় হয়ে পণ্ডিতী বই পড়বেই বা ক’জনা? এসো তুমি আর আমি মিলে শিশুদের বাংলা ও ইংরেজি বর্ণ পরিচয়ের ভার লই।”
বিদ্যাসাগর বই রচনা করতে শুরু করলেন। একদিন পাল্কীতে বসে লিখলেন, পাখি উড়িতেছে, পাতা নড়িতেছে, গরু চরতেছে, জল পড়িতেছে। লিখতে লিখতে নিজেই অবাক হয়ে গেলেন তিনি। বাংলাভাষা এতো সহজভাবেও লেখা যায়? যুক্তবর্ণ ছাড়া? সংস্কৃত ভাষার অভিভাবকত্ব ছাড়া বাংলা কি নিজের পায়ে ভর করে হাটতে পারে?
কিছুদিন পরে তিনি বের করলেন বর্ণ পরিচয় প্রথম ভাগ। অভূতপূর্ব সাড়া পেলেন। লেখক ও প্রকাশক তিনি নিজেই। দুহাত ভরে টাকা আসতে থাকলে তিনিও নিশ্চিন্ত হলেন, এবার নারী শিক্ষার জন্য ইংরেজি সরকারের কাছে আর হাত পাততে হবে না। কিছুকাল পরেই বর্ণপরিচয় এর দ্বিতীয় ভাগও প্রকাশিত হলো।
এভাবে চলতে চলতে সেই সময় বইয়ের নায়ক নবীনকুমার সিংহের সাথে বিদ্যাসাগরের অনেক মুহূর্ত কাটে। দুইজন যেন সমুদ্রের আছড়ে পড়া স্রোত, বেগবান, তেজস্বী। একে অপরের সাথে বাংলায় নতুন ভোর আনতে উন্মুখ। সেই গল্প নাহয় অন্য কোনো দিন হবে।
🔖এবার আপনাদের কাছে একটা প্রশ্ন, এই গল্পে প্রধান চরিত্র নবীনকুমার সিংহ ছাড়া আর কোন চরিত্র আপনাদের সবচেয়ে বেশি ভাবিয়ে তুলেছিলো? কার সুখ দুঃখে আপনার মন অস্থির হয়েছিলো?
নিজের পছন্দের চরিত্রের কথাগুলো জানাবেন অবশ্যই।
https://www.facebook.com/share/p/z46RK1Wxztpv2i7t/?mibextid=Nif5oz