Homeছোটগল্পপড়ন্ত বিকেল

পড়ন্ত বিকেল

দিল্লী  হতে কলকাতা আসার সময়   রাজধানী এক্সপ্রেস  ট্রেনে দেখা  হয়ে  গেলো  রুদ্র আর মিলির । অনেক  বছর  পর  দেখা ।
              রুদ্রর  বাবার  চাকুরীর  সুবাদে   চট্টগ্রামে  ছিলেন , সে সময়  রুদ্র   অনার্স এর  দ্বিতীয় বর্ষের  ছাত্র । মিলি  তখন প্রথম বর্ষের ছাত্রী ।

                 ভারতের  উন্নত এবং  নিরাপদ আরামদায়ক ভ্রমনের জন্যে রাজধানী এক্সপ্রেস   ট্রেনে মেহমান ধারী  খুবই ভাল মানের , যে যেমন খেতে চায় তেমনই  খাবার পেতে,  ঘুমুতে  কোন ব্যাপারে চিনতা  নেই । এখন অবশ্য  আরো দ্রুত গামী বুলেট ট্রেন  যাতায়াতের  জন্যে ব্যবস্থা করা হচ্ছে,  যাতে  অল্প  সময়ে সহজে  যাতায়াত  করা যায় ।

  রুদ্র   তার  মা বাবা কে নিয়ে  আর মিলি তার মা বাবার  সাথে  মুখোমুখি  সিটে বসা , চট্টগ্রামের মেয়ে মিলি আর রুদ্র  ঢাকার উভয় ই  বাংলাদেশী ।  তাদের গন্তব্য  বাংলাদেশের নিজ নিজ শহরে ।

         ট্রেনেই  দুই  পরিবার  এর গল্প গুজব  এ  একে অন্যকে বলছিলো … আমরা  যাদের  সেকেলে  বলেই  এড়িয়ে  চলি  তাদের  প্রতিটি  কথা  কিনতু  অভিজ্ঞতার  ঝুলি।   তাদের  কথার  গুরুত্ব দেয়া ও  মান্যতায়  জীবন  সুন্দর  হয়।   কেননা  অভিজ্ঞতা  আধুনিকতার  চেয়ে  অনেক  দামী , বল্লো মিলি ।

             কথা প্রসঙ্গে  রুদ্রের  মা  মিলির  মাকে  জিজ্ঞেস  করে   কিছু  মনে  করবেন না , আপনার  মেয়ে মিলির  বিয়ে হয়েছে ?
     মিলির  মা বলছিলো – আর  বলবেন না  ,মেয়েকে   উচ্চ  শিক্ষায় শিক্ষিত  করে বিয়ে  দিলাম খুবই ধুমধাম  করে ।

              বড় নিঃশ্বাস  ত্যাগ করে  মিলির  মা  বলা শুরু করলো —মেয়ে  মিলি পড়াশুনা  শেষে একটা  প্রাইভেট কলেজে  শিক্ষকতা করে …  অন্যে এক সরকারী   কলেজের  প্রফেসর’ রাহাতের ‘এর সাথেই  বিয়ে 
দেই । কয় মাস   যেতে না  যেতেই  মেয়ের  বেতন  নিয়ে  বাড়াবাড়ি তবুও মিলি  শান্তির  জন্যে বেতনের   একটা  অংশ দিয়ে ও দিতো।  এতে ও সন্তুস্ট  নয় রাহাত এরপর  অসম্মান অপমান এমনকি গায়ে হাত তোলা ,  বিভিন্ন  মেয়ের  সাথে  তার  বিয়ে বহির্ভূত সম্পর্ক   ও ধরা পড়ে । মিলি  সরাসরি জিজ্ঞেস  করলে  মিলির  স্বামী রাহাত    বল্লো — আমি  তোমাকে বিয়ে  করেছি  কিসের  জন্যে ? আমাকে  বিয়ের  জন্যে তো হাজার  ও মেয়ে  ছিলো । তোমার  বাবার  গাড়ী বাড়ি ও তোমার  বেতনের জন্যে ই তো   বিয়ে করা ।

                  সেদিন  মিলি  এসে  আমাদের সব বলে সেকি  কান্না , তার  কান্না দেখে  বুঝতে  পেরেছিলাম  শুধু শিক্ষিত  হলেই  মানুষ  মানুষ  হয় না ।
মা  জাতির  প্রতি  রাহাতের  কোন সম্মান বোধই  ছিলো   না ।
                  লোভ  মানুষকে  জঘন্য হিংস্র করে ফেলে  আসলে  যার  চরিত্র  নেই  তার  কিছুই  নেই । পরে  রাহাতের  সাথে সরাসরি  বসে  কথা  বললামঃ    লাজ  লজ্জা  ত্যাগ করে  বুঝালাম— সংসার  করতে গেলে  টুকটাক  ঝগড়া  হয়ই  ।
                 বিয়ে  তো  সুখী  হবার  জন্যে  একে  অপরকে  ভালোবাসার জন্যে  । উভয়ের  প্রতি  উভয়ের  কিছু  দায়িত্ব  আছে,  এগুলো  তুমি  শিক্ষিত  সবই জানো  কিন্তু   তুমি  যার সাথে পরকীয়া  করছো  তোমার  স্ত্রী মিলি ও সেরূপ  একজন নারী । 
তার ও ভালোবাসা  পেতে ইচ্ছে  জাগে,   সে  তো তোমার  মতো হতে পারবে না  , তাহলে  এ সংসার টা  সুন্দর হবে  কি করে ?
                 তার  উত্তর  ছিলো”  আমি  কি করি  না করি  তাতে  মিলির সমস্যা কি?  আমি  এমনই থাকবো ওর  ইচ্ছে  হলে  সংসার  করবে , নয়তো  করবে না ।

               রুদ্রের  মা  শুনে বল্লো –কি  বলছেন ? এ ছেলে  তো  মহা বেয়াদব,  আসলে  আজকাল  কারো প্রতি  কারো  বুঝা পড়ার  জায়গাটা  আগের  মতন নেই । বুঝি না  ঘরের বিশুদ্ধ  খাবারের চেয়ে  লোকেরা  বাহিরের  পঁচা  বাসি হোটেলের  খাবারের  প্রতি  কেনো এতো  অভ্যস্ত হয় , তাও বেশী টাকা খরচ করে । 

মিলির  মা  বল্লো  একদম ঠিক বললেন  আপা , ঘরের খাবার কতো  নিরাপদ স্বাস্থ্য সম্মত  তবু  লোকেরা  মুখরোচক অপুষ্টিকর খোলা   খাবারের  প্রতি  আসক্ত  হয় কারণ  ওদের চাকচিক্য  পরিবেশন । 
         অথচ  তারা  ভাবেই  না  ….
“হোটেলে বেশী দামে বাসি খাবারের চেয়ে  গৃহের  স্বাস্থ্য সম্মত  খাবারের মতোই  দামী উপকারী  নিজ  স্ত্রীর ভালোবাসা…  যা হালাল ও নিরাপদ মূলতঃ  ধার্মিকতাই  দেয়  সুন্দর ,পাপ মুক্ত  সুখী বিশুদ্ধ  জীবন ও শৃংখলা “
                   রুদ্রের মা  বল্লো   আমাদের  সময়  এতো  প্রযুক্তি এতো  এতো  জটিলতা ছিলো না । আমি  ও প্রাইমারী স্কুলের  শিক্ষিকা ছিলাম,   যখন  দেখলাম  সংসারে  অসুবিধে  হচ্ছে  নিজেই চাকুরী ছেড়ে  দিলাম ।  আমার  মধ্যে  কোন  খারাপ  লাগা  কাজ করেনি বরং  মনে হলো  ডাবল  ডিউটি  করে  লাভ কি ?

               সেক্রিফাইজ  ব্যাপারটা  আসেই  ভালোবাসা  হতে , বুদ্ধিমানেরা  যাকে নিয়ে  সংসার  করবে , জীবনের  শেষ  পর্যন্ত এক সাথে  যাকে নিয়ে  কাটাবে ,  সুখে দুঃখে রোগে শোকে প্রতিটি  মুহূর্ত যার সাথে  শেয়ার করবে   সে মানুষটিকে  অবহেলা করার মতো বোকামী অন্তত করবে না , কেননা   মনের  পরিচর্যা  জরুরী নয়তো সেখানে ও  ধুলোবালি জমে আবছা হয়ে যায় সম্পর্ক  মানে অভিমানে দূরত্ব  বেড়ে যায়। বুঝা উচিত  সঙ্গীর মনের  খুশী মানেই সুন্দর  সংসার , উত্তম  সন্তান,   গোছানো পরিবার আর  নিজের  নিরাপদ  ভবিষৎ  তথা  সুখের  একটা  নীড় ।

     ক্ষনিকের  মোহে  পড়ে   আসল অস্তিত্ব কে  নষ্ট  করার মতো বোকামী কি হতে পারে ?
                 আমাদের  মা বাবাদের  জীবনে  কে  কার  পাশে  শেষ পর্যন্ত ছিলো বা আছে সেটা  ভেবেই চলা উচিত ।

কারা কেমন আচরণ করেছে  সেই  পরিস্থিতি   নিজেদের ও জীবনে   আসবে ই , সেটা  ভেবেই  চলা  উচিত  নিয়মের  বাহিরে গেলেই  সমস্যা  হয় । ভালোবাসার  সাথে  কখনো স্বার্থ  জড়িয়ে  গেলেই  সেটা লোভে রূপান্তরিত  হয় । আর সেখানে  ভালোবাসা  থাকেই  না ।  

          ঠিক  বলেছেন  আপা ।    মিলির  মা  বল্লো  -এরপর  ওদের  নিজেদের  ইচ্ছেতে  তালাক হয়   আজ  এক বছর ।
            রুদ্রের  মা  বল্লো  সবই  কপাল  আপা ,  এত্তো  সুন্দর শিক্ষিত  গুণী মেয়ের  জীবন  এমন হবে ভাবতেই  ক্স্ট হয় । লোকে   তালাক  বললেই  ভাবে  মেয়ের  দোষ ,  তালাক  ইসলামের  একটা  বৈধ   স্বীকৃত  বিষয় ।  এতে  মন্দের  কিছুই নেই  মন  খারাপ করবেন না ।   যদিও ছেলেরা  পরকীয়া  করতে ভয়  করে না  কিনতু  তালাক প্রাপ্ত মেয়েকে  বিয়ের  জন্যে  ভাবে না  অথচ তালাক প্রাপ্ত  বা  বিধবা মেয়েরা  সংসারী হয়  বেশী  ।

                        আমার  এ ছেলেটার জীবনে ও সুখ  মিলেনি । পড়াশুনা  শেষ  করে ই  আমার  ছেলে   রুদ্র   বিদেশে  চলে  যায়।  এক  মেয়েকে    ভালোবাসতো ,দেশে এসে বিয়ে করার জন্যে  বাড়ি করলো , মেয়ে খুবই  ধনী পরিবারের  ছিলো  ওরা  মেয়েকে   আমার  ছেলেকে বিয়ে দেবে না , তাই  রুদ্র  ও  রুদ্রের  বউ  আন্নি ওরা  নিজেরাই  বিয়ে  করে  নেয় । পরে  আমরা  অনুষ্টান  করি  কিনতু  রুদ্রের বউ  আন্নি  বল্লো   আমাদের  নিয়ে একসাথে থাকবে  না । 
         তখন  ছেলেকে  আলাদা একটা  ফ্লাট এ দিয়ে  দিলাম ।কারণ   সন্তানদের  জন্যে ই  তো সব করা তাদের  সুখেই   আমরা  সুখী । রুদ্রের  বাবা  বলে  উঠলো   শুধু  কি তাই  জায়গা  জমি  রুদ্র ও আমার  ছোট  ছেলে রুদ্রের  ছোট ভাই  আশেককে  ভাগ করে  দেই  ।
                   রুদ্রের  বউ  আন্নি কে কাবিন বাবদ  জমি ও লিখে দেই  দুই  কাঠা ।  তবুও  আমার  ছেলের  টাকা গাড়ী ফ্লাট  নেই  বলে  আন্নি  দুই  বছর সংসার  করে  চলে যায়।  রুদ্র কতো  মিনতি  করলো,  কাঁদলো রুদ্র  কথা শুনলো  না ।
                    দুই  বছর যেতে না  যেতেই  বউ মা আন্নি  তার   মা বাবার কথা  মতো রুদ্রকে তালাক দিয়ে খালাতো  ভাইকে   বিয়ে  করে কানাডা চলে যায়।
                       রুদ্রের  মা  আর  মিলির  মায়ের বলা  কথা  গুলো  উপরে  ট্রেনে  সিটে  শুয়ে  থাকা  মিলি ও রুদ্র  শুনছিলো দুই জনেই চুপ চাপ ।  কথায়  কথায়  দুই  পরিবারের  মধ্যে  ভাল একটা  বন্ধুত্ব সম্পর্ক  হয় । ট্রেনে কথায় কথায়  কেটে  গেলো বারো  ঘনটা । সতেরো  ঘনটার  এ  ভ্রমণে  ভালই  খানা পিনা গল্প কথা চলছিলো মুরুব্বীদের  মধ্যে ।

     রুদ্র মিলির দিকে তাকালে ও মিলি  সারা সময় মোবাইলে  কি যেনো লিখছিলো । আর  রুদ্র  একটা  বই পড়ছিলো  মন দিয়ে ।
       হটাৎ  রুদ্রের  মা  মিলিকে  লক্ষ্য  করে  বল্লো  তুমি তো  ভালই  লিখো  মা , তোমার  প্রকাশিত  বই গুলো রুদ্র প্রায়  পড়ে ।   
এবার তো  মিলি  অবাক  হলো  কি  বলেন আনটি ? এবার  রুদ্র  বল্লো  জ্বী  ম্যাডাম দেখুন  এখনো পড়ছি ।
        মিলির  চোখে  মুখে  একটা বিস্ময় ও আনন্দ  বিরাজ করে ,  আসলে  আমি  এখনো  লিখছি ….
     রুদ্র  বল্লো  -আপনার  লেখায়   উক্তি  গুলো  অসাধারণ ।
সামনে  কি  বই  পাবো  ?
মিলি  বল্লো — আমি  সব  চলমান জীবনের  বাস্তবতা  নিয়ে  লিখি ,  তাই  পাবেন  আগামীতে।

         ট্রেনের  টমেটো জুসটা  দারুণ  , বিকেলের  নাস্তা  , সকালের চা  দুপুরের  রাতের  আয়োজন সব সুন্দর ও পরিষ্কার ।
আমাদের  বাংলাদেশে  ট্রেনের  যোগাযোগ টা  যদি আরো  উন্নত হতো  তবে যানজট অনেক কমতো ।

               মিলি  বল্লো  চলুন আমরা   এসে পড়েছি ,
           ঢাকায় এসে  নেমে  গেলো রুদ্রের  পরিবার  বিদায়  নেবার  সময় একে অপরকে  বিদায় সম্ভাষণ  জানালো ।

             রুদ্রের  মা  বাড়ি এসেই  রুদ্রের  বাবা কে বল্লো  …মিলি  মেয়েটি  দেখতে বেশ  সুন্দর ও লক্ষী । রুদ্র বল্লো  ওরকম  দূর  হতে  সব  সুন্দর লাগে মা ।
তুই  তো  ভাল সব কিছুই উল্টো  দেখিস ।

            অনেকদিন পর  মিলিকে  text…করে জন্ম দিনের শুভেচ্ছা  জানালো  রুদ্র …
রুদ্র  বল্লো–
  আরে  কবি মিলি আপনি তো খবরই  নিলেন না  একবার ।
মিলি :-আসলে সময় পাই  না  কলেজ , লেখালেখি,  বাসার  কাজ  সব তো করা লাগে।
আমার  জন্ম দিনের খেয়াল রেখেছেন আমি তো অভিভূত হলাম  অনেক  ধন্যবাদ ।  আসুন একদিন  পরিবার   নিয়ে চট্টগ্রামে  ভাল  লাগবে ।

রুদ্র :- হ্যা  দেখি  আমি তো  ব্যবসা করি এখন সময় পেলেই  ঘুরি । …মাঝে  মাঝেই  ইচ্ছে  করে সব ছেড়ে দূরে অজানা তে  হারিয়ে যাই ।
মিলি :-  হুমমমম ঠিক  বললেন সাথে  একতারা কিংবা দোতারা নিয়ে …
রুদ্র : হাহাহাহা ….বাহ !  বিষয় টা  সত্যি  উপভোগ্য …আমাদের জীবনকে আমরাই  জটিল করি।

রুদ্র :মূলতঃ  আমরা তো  ৭০/৮০বাঁচি  এর  মধ্যে  মা বাবার  বন্ধনে  ৩০ বছর কেটে যায়।  এরপর  নিজ নিজ স্বার্থে জড়িয়ে  পড়ি , গাড়ী বাড়ি সেও সব  পরের তরে করা , কিছুই কিনতু আমাদের  নয় ।    দেশে বিদেশে ঘুরে  ঘূরে  জীবনকে  উপভোগ করার  মজা ই  অন্যরকম ।
মিলি :হ্যা  এটা তো ঠিক তবে ভাবি ….
কি হবে এতো প্রকাশে ?   হবে কি  আরেকটা সংশোধিত  জনম !  বৃথাই     ব্যাকুল  প্রদর্শন পন্ডশ্রম…  যাপিত সে একই  জীবন ,  যেখানে  বাধিত নিজ নিজ  ভুবন… অতঃপর  নিশ্চিত  মাটির আয়োজন ।
রুদ্র :- বাহ ! সুন্দর বলেছেন তো , আমরা  কেনো করি  এতো ক্স্ট এতো এতো  বিলাসী  আয়োজন নিজেরাই  বুঝি না ।
মিলি :- হ্যা লোভ , লোভে আমরা সব ভুলে যাই…..
                     অথচ আধুনিকতার  প্রতিযোগীতায় আমরা  যা পেলাম তার  সারমর্ম  হলো – এমন একটা  বিচ্ছিন্ন  দ্বীপ চাই যেখানে কোন দুঃখ ক্স্ট ক্ষুধা  হতাশা জীবনের কোন কারণ স্পর্শ  করবে না  , ফিরে দেখা  সেই সোনালী  ধান ক্ষেত  রৌদ্র ছায়া ,নদীর কুলে বসে হিমেল  বাতাসে  জীবনের  স্বপ্ন গুলো আঁকড়ে ধরা ……

           রুদ্র এবার বল্লো সত্যি ই  আপনার সাথে যত  কথা বলছি  ততোই  মুগ্ধ হচ্ছি । আচ্ছা  আপনি  রান্না পারেন ?
মিলি বল্লো কি  বলছেন!  রান্না  তো আমার প্রিয় বিষয় । রান্নাকে আমি আর্ট হিসেবে দেখি , ধরুন বেগুন  ভর্তাটাতে  আমি আলু সিদ্দ্ব , পোড়া টমেটো মিক্স পোড়া মরিচ ,কাঁচা মরিচ , ধনে পাতা, সরিষা তেল সব কিছুরই সংমিশ্রনে  বানাই । এটা আলাদা  হয় একেবারেই এরকমই  বিরানী করার সময় লেবুর খোসা টা  ব্লেন্ড করে দেই  খেতে লেবুর  একটা সুবাস দারুণ হয় কিনতু ।
রুদ্র  বল্লো  চমৎকার তো ….


মিলি বল্লো আপনি পারেন রান্না ?
রুদ্র বল্লো  আমি  সব কাজ ই  পারি , জীবনের  বাস্তবতা  আমাকে সব শিখিয়েছে ।
আপনি যদি  অভয়  দিন তবে  ভালো  বন্ধুর মতো আমার  জীবনের  সব শেয়ার  করতে  পারি আপনাকে।
মিলি  বল্লো  অবশ্যই    ভাল বন্ধু জীবনে  কিনতু  ভালো  একজন ডাক্তার এর মতো।
রুদ্র :-  একটা  জরুরী  বিষয়  নিয়ে  লিখবেন …যদিও
           আমি  সব  মা বাবাকেই   বলি , ছোট বাচ্চাদের কখনো ই   কোন  বন্ধু বান্ধব আত্বীয়  স্বজনদের হাতে ছেড়ে  দেবেন না । আপনি এ  ব্যাপারে  লিখবেন ।
শিশুরা  খুবই অসহায় ওদের  ক্স্ট গুলো  ওরা মুখ ফুটে  বলতে ও জানে না  বা  ভয় ভীতির  কারণে বলে না  ।
                 আমাদের সমাজের  এসব অপকর্ম  গুলো নিয়ে খুব  একটা কেউ বলে না  অথচ  একটা  শিশুর  সমস্ত  জীবনকে ধংস  করার  জন্য একটা  অপকর্ম যথেসট ।
                     আজকাল   বাবা মায়ের বিচ্ছেদের কারণে অহরহ শিশুরা   অনিরাপদ  ভয় ভীতি  নিয়ে  বড় হয় …ওদের  জন্যে খুবই  চিন্তা হয় ।

   মিলি   বল্লো — আমি  সত্যি ই  অবাক হলাম  আপনি এতো  গভীর  একটা বিষয় কতো  সুন্দর ভাবে তুলে ধরলেন , কতো  ভাবেন  ! আপনি বড় ভাল মানুষ । এরপর ও  কেনো  ভাবি  আপনাকে ছেড়ে  গেলো  বুঝি না ।

রুদ্র  বল্লো –দেখুন    প্রিয়  জিনিসের  মতো  আমাদেরও জীবনে  প্রিয়  অনেক  মানুষ  থাকে  তাদের  ভুল গুলো  ও আমাদের কাছে মধুর  লাগে।  তাদের  স্বার্থপরতা,   অন্যায়  গুলো  অন্যেরা  বললেও খারাপ  লাগে ,তেমনই  আন্নি কে  নিয়ে কিছুই  বলতে  চাই  না ।    

আমি  জানি  আমার  স্ত্রী আন্নি  খুবই উচ্চাকাঙ্ক্ষী ছিলো আমার  হিসেবী জীবন তার কাছে  অসহ্য ছিলো তাই  হয়তো …..

       মিলি :-       ভালোবাসা মানে তাকে  পেলাম না  বলে  তার  নামে  বদনাম করা নয় বরং  এটা  জঘন্য  নোংরামি , পাবার  সাথে  ভালোবাসার  কোন সম্পর্ক  নেই । বরং সম্মানের  সাথে  তাকে  অন্যের  কাছে  তুলে ধরার  নামই  ভালোবাসা । আর  আপনি ভাবি কে  সত্যিই  ভালোবাসেন  বুঝলাম ।

রুদ্র  :- ভালোবাসার  সঠিক  সংজ্ঞা বিশ্লেষণ জানি না … বিষয় টা   বড় জটিল।

মিলি :-  আমি আসলেই  বুঝি  না  ছেলেরা  ভালোবাসা ব্যাপার টা  কিভাবে  নেয়….।

             রুদ্র :-      কথায়  কথায়  ভালোবাসি  বল্লেই  ভালোবাসা হয় না , এটা মূলতঃ অনেক  গভীর  একটা  বিষয়  । সত্যিকারের  মন  দিয়ে  উপলব্ধি  করলেই  আমরা  বুঝি ভালোবাসা  সেটাই….  যা  একজন  সন্তানের  প্রতি  মায়ের  এর ভালোবাসার  মতো  স্বার্থহীন হয় । আজ  রাখি পরে  কথা  হবে  বলেই  কেটে  দিলো ফোন ।

                 দুই দিন হয়ে গেলো  মিলির জন্যে রুদ্র ছটপট করছে   কথা বলতে ইচ্ছে করছে তার , কি ব্যাপার নিজেকেই নিজে প্রশ্ন করে  তবে কি একাকীত্ব ভর করলো? রুদ্র যে কোন বিষয় নিয়ে  একটু বেশী ভাবে  , একটু কথা বল্লে  নিশ্চয়  মন্দ  ভাববে না  মিলি ।


কল করে  মিলি কে ….
মিলি :- হ্যালো ….হ্যা  বলুন  , আমি আসলেই ব্যস্ত  ছিলাম ,
রুদ্র :- ব্যস্ততা একটা ভাল দিক , আচ্ছা মেয়েদের  অতিরিক্ত  সাজ গোঁজ নিয়ে  আপনার  মন্তব্য কি ?
মিলি:- হঠাৎ  এ প্রশ্ন ? মূলতঃ আমি  বিষয় টা অন্যে ভাবে  ভাবি যেমন-
                      আমি  মানুষ যেমন আমার  স্রষ্টা আমাকে  সৃষ্টি করেছেন তাই  শ্রেষ্ট , তবে কেনো রঙ মেখে সঙ  সেজে  নিজেকে  অল্প সময়ের জন্যে  ছোট করবো ?  মানুষের  পরিচয়  সে মানুষ , সফলতা ব্যার্থতা  নির্ভর করে তার শ্রম মেধা ও কর্মে ।    
         কেউ  যদি কাউকে সম্মান করে  সে শুধু মাত্র  চরিত্রের  কারণে । চামড়া পরিবর্তন  কখনোই  সম্ভব নয় তবে কেনো মিছে এ প্রহসন ?

                          রুদ্র :- আপনার  কথা মানতে গেলে তো অর্থ নীতি ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে   বিরাট  পরিবর্তন  দেখা  দেবে , একদিকে পার্লার  কসমেটিক খরচ ও সময় বাঁচবে,   অন্যে দিকে   বন্দ হবে ধোঁকা প্রদর্শনী  ব্যবসা আর এসব এর  সাথে জড়িত কোটি  কোটি টাকার কসমেটিক সংশিলষ্ট  ধোঁকা বাণিজ্য ।
   মিলি :- আসলেই এ নিয়ে  প্রকাশ্যে  বলতে  গেলে মেয়েরা  আমার  আস্ত রাখবে  না । কারণ  আমরা  মেয়েরা  একটু পাগলা ধরনের । অন্যের  জন্যেই  সারা জীবন  ক্স্ট করতে করতে  মরতে  মরতে বাঁচার  মধ্যে সুখ খুঁজে  পায় ।

রুদ্র :-  আমি  ঠিক  আপনার  মতোই  ভাবি , মেয়েরা  ত্যাগী ….এ  সৃষ্টির  রহস্যময়  নারী ও পুরুষের  রসায়ন টা  কেমন যেনো অদ্ভূত । এই  ধরুন আমি আপনার সাথে কয়েকদিন  মাত্র  কথা বললামঃ ব্যস আমি মিস করা শুরু করলাম কিনতু কই  আমার  এতো ছেলে  বন্ধু আছে  ওদের  জন্য ব্যাপার টা  হচ্ছে না কিনতু ।

মিলি: – হাসতে  হাসতে  বল্লো  তাই  নাকি ? কেউ  আমাকে মিস করে  শুনে আমি  না  সত্য ই    আনন্দ অনুভব করছি !আমি ব্যাপার টা  উপভোগ করি।
আপনার  সাথে  কথা বলার  পর  হতে  আমি  আমার  অতীত ভুলেই গেছি আর  ডিপ্রেশন  কাজ করছে না ।

রুদ্র :- বন্ধুত্ব   কিনতু  খুবই জরুরী , ডিপ্রেশন  হতে মুক্তি পেতে  মনের  মতো  বন্ধুর  কোন বিকল্প  নেই ।

মিলি :-দেখুন আমরা  যখন  কোন কিছু লিমিট বা সীমিত  করতে  চাই  তখন ই  জটিলতা  শুরু হয় । আপনি  স্বাভাবিক ভাবে বন্ধুত্ব  শুরু  করুন তারপর  এগিয়ে  যেতে থাকুন  কোন বাধ্য বাধকতায় না রাখলে সম্পর্ক টা  যতোটা  মজবুত ও দীর্ঘ  হয় বিপরীতে  চিন্তা করলেই  হিতে বিপরীত হয় ।
রুদ্র :- wow! চমৎকার  বলেছেন । আপনার  মধ্যে  আমি অসাধারণ সুন্দর  কবিত্ব দেখতে  পাই । লোকে  কবিদের কেউ কেউ মন্দ চোখে  দেখে অথচ  কবিরা স্বচ্ছ ও উদার  ভাবেই  সব ভাবে ।  
  আপনার  সময় হলেই  কথা  বলবেন , আজ রাখি । একটা  শেষ কথা  বলি ?
মিলি :- হ্যা  নিশ্চয়ই
রুদ্র :-  আপনাকে  আমার ভীষন  ভাল লাগে।
মিলি  :- ধন্যবাদ বলেই এড়িয়ে যায়..
রুদ্র বুঝতে পারে  মিলি  অনেকটাই স্বাধীনচেতা ও কোন রকমের  বাধ্য বাঁধকতায় জড়াতে চায় না ,  বিবাহ  বিচ্ছেদ হবার পর যে কোন মানুষের জন্যে কাউকে বিশ্বাস করা কঠিন ই  বটে ।
   রুদ্র ভাবলো ভাগ্যে  ভাল  মিলির  কোন সন্তান হয়নি নয়তো কি জটিল হতো মিলির জীবনটা ,না  বাঁচতে  পারতো না  মরতে , আসলেই বিয়ের  পর বছর  দুই মানসিক ব্যাপার মিলছে  কিনা সারা জীবন একসাথে অতিবাহিত  করা সম্ভব  কিনা,  সব বিবেচনা করে সন্তান নেয়া  উচিত ।

পরদিন মিলি ই  ফোন  করে ….

মিলি :-হ্যালো রুদ্র সাহেব  কেমন আছেন ?
রুদ্র :- আলহামদুলিল্লাহ , আসলে আমি মনে মনে  আপনাকেই ভাবছিলাম ।
মিলি :- তাই  নাকি ? কেনো কোন জরুরী বিষয় ?
রুদ্র  :-  না  আপনার  সাথে  কথা  বলতে  আমার  ভীষন ভাল  লাগে। মূলতঃ  বন্ধুত্ব  বিষয়  টা অনেক  বড়  বিষয় ।
মিলি :- ঠিক  বলেছেন যদি তা  বন্ধুত্বের  মাঝে সীমাবদ্ধ  থাকে ।  যদিও ছেলেতে  মেয়েতে  বন্ধুত্ব ব্যাপার  টা  নিজেদের  ব্যক্তিত্বের  উপরে  নির্ভর  করে।

রুদ্র :-  ব্যাপার  টা  নিজেদের মানসিকতার  উপরে  , যেমন  একটা    চরিত্রহীন  দেশে  তুলনামূলক  চরিত্রহীন লোকদেরই  সম্মান ও  মূল্যায়ন বেশী
মিলে … সে ক্ষেত্রে   বেশিরভাগ  জ্ঞানী  নীতিবান  লোকেরা বোবা  বধির অন্ধ  হয়ে  বাঁচে … অপমানিত  হবার ভয়ে  কিংবা লজ্জায় ওরা পরজীবীর  মতো  জীবন যাপন করে…
মিলি  :- লোকেরা  তো চরিত্র হীনতাকে ই  বেশী  পছন্দ করে । তাই  না ?
রুদ্র :- কি  রকমের  ? খুলে  বলুন ।
মিলি  :- ধরুন  -আমি ,  ব্যক্তি  পরিবার  সমাজ  রাষ্ট্র  নিয়ে  কি  লিখছি  কতো টা  উপকারী বিষয়  নিয়ে  লিখছি তা কেউ  পড়বে  না কিনতু   আমি  নারীর   শরীর  নিয়ে কিংবা  লোকদের  চরিত্র হীনতার   গল্প নিয়ে   লিখলে   তার  পাঠক  সংখ্যা  হাজার গুন  বেশী হবে ।

রুদ্র :- এটা  সত্যে  বলেছেন আসলে  নষ্ট  ভাবে বেড়ে  উঠা নষ্ট  পরিবেশের   মানুষেরা   নস্টামি  ছাড়া কিছুই  ভাবতেই  পারে  না ।

মিলি –আমাদের  বেড়ে  উঠা মনস্তাত্ত্বিক  ভাবনাই এসব  বিকৃত  মানসিকতার  কারণ । অথচ  আমরা  ধার্মিকতাকে  কেন্দ্র  করে মানুষ হত্যা  করে  নিজেদের  ধার্মিক  দাবী  করি  ।
রুদ্র :- ভাবতেই  অবাক  লাগে , কতো টা  চরিত্র অধঃপতন  হলে এমন হয় । আমরা  ধর্ম  ধর্ম  করি  কিনতু  ধর্মের  উদ্দ্যেশ্য  কি  ভাবি না ।

মিলি  :-  আচ্ছা  আজ  রাখি পরে কথা হবে …       রুদ্র এর মা  সেদিন মিলির মা কে ফোন করে জানালো রুদ্র  মিলিকে ভীষন পছন্দ করে তেমনই উনাদের ও খুবই  পছন্দ । মিলির মা বিষয় টা  মিলিকে জানায়। মিলি রুদ্রকে  একটা sms..করে ….
মিলির লেখা টি  রুদ্র পড়ছে……
                  ”  মনে হয়  খুব বেশী  কাউকে আপন ভেবে ক্স্ট  পাবার কোন মানে হয় না , জীবন হতে বা কারো  কাছে বেশী আশা করাটা  ও এক ধরনের বোকামী ।
                          এই  চলমান জীবনে  মাঝামাঝি সুসম্পর্ক গুলো চিরকাল গতিময় থাকে,  কখনো  শেষ  হয় না । কারণ অতিরিক্ত  কোন আশা ভরসা থাকে না  বলেই স্বকীয়তা স্বয়ংসম্পূর্ণ ও আত্বনির্ভরশীল হয় সম্পর্ক গুলো।
                           তাই  আমি আবেগের  চেয়ে  বিবেক দিয়ে চলি  বেশী,  এ কারণে   ক্ষনে ক্ষনে সম্পর্কে  জড়াই   না আমি ।    মধ্যেম  পন্হায় চলি ,  জীবনকে  আনন্দের  সাথে  গ্রহণ করি ।   চিরন্তন  জীবন সঙ্গী দুঃখকে স্বাভাবিক ভাবে মেনে নিলেই  জীবনকে সুন্দর ও সহজ ভাবে কাটানো যায় যা একটা শিল্প।

                 রুদ্র শুধু বলেছিলো আমি জানি মেয়েরা নিজেদের মনের কথা গুলো ঠিক মতো প্রকাশ করে না  ওরা ভাবে ওদের মনের গোপন ইচ্ছে প্রকাশ করলেই  সমাজ ওদের মন্দ বলবে এমনকি যাকে পছন্দ করে সেও  মন্দ ভেবে বসবে এই  ভেবে দূরে থাকে । তুমি একদিন ঠিক ই  রাজী হবে আমি ও অপেক্ষায় রইলাম ।   

আশে পাশের সংসার গুলো দেখে দেখে মিলির   বিয়ের প্রতি একটা বিতৃষ্ণা এসে গিয়েছিলো কেননা  সুখী হবার জন্যে যদি বিয়ের কারণ না  হয় তবে সে সংসার বিয়ে নিস্প্রয়োজন ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

এই লেখকের আরো লেখা

বৈশাখ

সম্পদ

এই ক্যাটাগরির সর্বাধিক পঠিত

সাম্প্রতিক মন্তব্য