Homeগল্পসম্পদ

সম্পদ

জেবুন্নেছা জেবু

     লোকটা  রমজান মাস  এলেই  সরকারী  হাসপাতালে ভর্তি নেন বিশেষ  করে  একবার  প্রথম দিকে  আর  ঈদের কয়েক  দিন আগে ।   ব্যাপারটা কয়েক বছর  ধরেই  চলছে । 

       প্রতিবেশী  হিসেবে  জানতে চাইলাম ভদ্রলোকের ছেলের কাছে  উনি এখন  কেমন  আছেন  ? স্বাভাবিক  ভাবেই  ছেলেটা  উত্তর   দিলো  পুরা ই   সুস্থ । বললামঃ  এ  কেমন  কথা ! এবার  বিষয় টা কেমন  যেনো রহস্যময় লাগলো । এটা  কয়েক বছর  আগের  কথা  । বাসায়  উনার  অত্যাচারে  সবার  দম  বন্ধ  হয়ে  যাবার  অবস্থা। 

                 তারেক সাহেব  অবসর  নেয়ার  পর  হতেই  এ অবস্থা । দুইটা  বিল্ডিং  এর  ভাড়া কাউকে  ধরতে ও  দেন  না । সবার  ঘরে ঘরে গিয়ে উনি নিজেই নেন ।  হাড় কিপ্টে  শয়তান লোকটা  নাকি  রমজানের  ও  ঈদের  খরচ  হতে  বাচাতে   হাসপাতালে  ভর্তি নেয়ার  মূল রহস্য।

          উনার  অতি  কিপ্টেমিতে  অতিষ্ট  ছেলে মেয়েরা  রীতিমতো এতো টাই  বিরক্ত  একেতো তারা  মানুষকে  বলতে  পারে  না তাদের  বাবা  আসলে  অভিনয়  করে  হাসপাতালে  ভর্তি  হয়,  অন্যদিকে  ছেলে মেয়েদের  অবহেলা  দেখে  আত্বীয় স্বজন  তাদের  ভুল বুঝে  । ফোনে  উপদেশ  দেয়  বকা দেয়  এসব   সমস্যায়  জর্জরিত  ওরা । ছেলে ছেলের বউ  ও মেয়ে মেয়ের  জামাইরা  ঠিক করলো এবার  কেউ  আর  হাসপাতালে  যাবেই না , দুই ছেলে  দুই  মেয়ের মধ্যে  বড়  মেয়ে  জাপান  থাকে ।  যা  হবার  হবে   এবার কেউ দেখতে যাবেই  না । 

            এদিকে  লোকটা  হাসপাতালে ভর্তির  আগেই  থানায়  জিডি  করেছে বিষয়   তার  সন্তানরা   সম্পত্তির   লোভে  তাকে মেরে  ফেলার  ষড়যন্ত্র করছে বলে  মিথ্যা  তথ্য দিয়ে । 

                  ডিউটি  অফিসার  পুলিশ  তদন্ত করতে  বাসায়  আসলো, সবাই   তো  অবাক বড় ছেলে  পুলিশ  দেখেই  বোরকা পরে   তাড়াতাড়ি  করে  পেছনের  দরজা  দিয়ে  বেরিয়ে  হাসপাতালে  চলে  গেলো ।  

      এদিকে  পুলিশ  ছোট ছেলে কে  বললো 

বলুন  আপনার  আব্বাকে   কোথায় রেখেছেন?  ছোট ছেলে  তমাল  বল্লো   বাবা  একটু আগেই  বাহিরে  গেছে । বিশ্বাস  করুন  আমরা  কোন  অপরাধ  করিনি । পুলিশ  বল্লো  আপনার  মা  ও অনান্য  সদস্য সবার  জিজ্ঞাসা বাদ  হবে।  ব্যাপারটা   জটিল  লাগছে,  আপনারা সবাই   মিলে  উনাকে  কোথায়  গুম  করেছেন ?  

       তারেক  সাহেবের  স্ত্রী  বয়স্ক  মহিলা। পুলিশ কে  সব  সত্য  বলার জন্যে কোরান  শরীফ হাতে নিয়ে বসে  আছে।   পুলিশকে বল্লো  আমার  ছেলেরা  নির্দোষ আমি  সব  সত্যি  বলছি । একে  একে  সবই  বললো  পুলিশ কে , বললো  প্রয়োজনে  আপনি  হাসপাতালে গিয়ে দেখুন ।

    আচ্ছা  চলুন  হাসপাতালে  আপনাদের  কথার  সত্যে তা  যাচাই  করতে   হবে। 

  এদিকে  এলাকায়  সব  লোকে  দেখলো  তারেক  সাহেবের  অতি  সোজা নিরীহ ছোট  ছেলেকে  পুলিশ    নিয়ে  যাচ্ছে এ  অপমানে  অপদস্থ  তমাল  এর  বউ  কাঁদছে  আর  বেগ  গুছিয়ে  ভাইকে খবর  দিলো বাপের  বাড়ি  চলে  যাবে এক মুহূর্ত ও এ  বাড়িতে থাকবে না । 

        হাসপাতালে  পুলিশ ও তমাল এর  আগমনে  তারেক  সাহেব  ভীষণ  খুশী  । তমাল  নতুন   বিয়ে করেছে  নতুন  শশুর বাড়ি  তার  সম্মান টা  ও ভাবলো না ।  তারেক সাহেব  পকেট হতে কিছু টাকা বের  করে  পুলিশ কে  দিলো  উনার  ক্ষমতা  দেখাতে ও পরিবারকে  হুকুমের  গোলাম  বানাতেই   এমন  টাকার  অপব্যবহার  করেন  লোকটা ।  

অথচ  পরিবারের সাথে  যত  রকমের হিসেব করে। তাদের  সুখ শান্তি সম্মান  এর  চেয়ে  নিজের আধিপত্য  বিস্তারই  তার  কাছে প্রধান ।    

পুলিশ  চলে গেলে  তারেক  সাহেব  ছেলেকে   বল্লো  কেমন লাগলো ? 

                  ছোট  মেয়ে  লিপি বড় বোন নিপা কে  ফোন  দিয়ে  বল্লো আপা  তুইতো    সুখেই  আছিস ।  এবার বাবা সরকারী  হাসপাতালে  ভর্তি  নিয়েছে  ,  ওখানের  পরিবেশটা  কতো  খারাপ  আর  ওখানে  রোগী  গিজগিজ করছে । নিপা  বল্লো  এখনই   মাকে  নিয়ে আয় তোর  কাছে। মাকে  সারাজীবন ই  জ্বালায় মারছে  শান্তি  দেয়  নাই । তারেক  সাহেবের নতুন  বেয়াই   সব  শুনে তো  বলেই  দিলো  ছোট  ছেলে  তমালকে  

বাবা,  তোমার  বাবা  একজন  স্বার্থবাদি খারাপ  মানুষ । এমন  অনেক  মানুষ  এ  সমাজে  আছে  যারা উপরে ভাল  মানুষ  সেজে  ভেতরে  ভেতরে  পরিবারকে  ক্স্ট  দেয় । এরা  মূলত  চরিত্রহীন   মানসিক বিকৃত  মনের মানুষ ।  মাথা  নষ্ট  হয়ে গেছে  তার ,  আমার  আত্বীয়  পরিচয়  দিতে  ও  লজ্জা  হচ্ছে ।  

                 হাসপাতালে  ছোট ছেলের  শশুর  ফোন  দিয়ে  তারেক  সাহেব কে  বল্লো  দেখুন  আপনি  টাকা  বাঁচাতে  প্রতি বছর  এমন  নোংরা  কাজ  করেন  ভাবতেই  লজ্জা হচ্ছে ।  

আপনি  হাসপাতালে  নার্সদের ,  থানায় পুলিশকে ঠিকই  টাকা দিচ্ছেন আর ভাবুন গরীব  মানুষ গুলোর কথা  যাদের কোনো আয় নেই, অসহায় পঙ্গু তাদের দান করুন শান্তি  পাবেন। জীবন হতে একদিন সব ফেলে যেতেই  হবে কার জন‍্যে এসব কৃপনতা করেন?

সব শুনে খুব  চিন্তায় পড়ে গেলো তারেক সাহেব। ভাবলো আগামী বছর হতে এমন কাজ আর করবেন না বড় ছেলেকে বললো বাবা অনেক ভুল করেছি এবার  আমি সব ভুল শুধরাতে চাই। বাড়ী নিয়ে  চল।

         পরদিন  সব গোছানো  হচ্ছে  খুব  খুশী  বড় ছেলে।এমন সময়  তারেক সাহেব হঠাৎ  কাশতে কাশতে মাটিতে  পড়ে যায়।

               অভিনয়  ভেবেই কেউ পাত্তাই দিলো না বিষয় টা। এরপর হঠাৎ  স্ট্রোক করে মারা গেলো লোকটা। সময়ের কাজ সময়ে করতে হয় , কাল হতে ভালো  হয়ে  যাবো,দায়িত্ব শীল হবো, দান করবো, ধার্মিক হবো এমন ভাবাই ভুল। সময়  বড় অমূল্য  ধন সম্পদ নয়।।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

এই লেখকের আরো লেখা

এই ক্যাটাগরির সর্বাধিক পঠিত

সাম্প্রতিক মন্তব্য