হারিয়ে যাওয়া পুরান / রোকন-উজ-জামান
ওয়েবসিরিজ, হলিউডের কল্যানে আমরা গ্রীক, নর্স মিথলজি নিয়ে কত কিছুই না জানি। অ্যভেটার বা এভেঞ্জার সিটিজের কল্যানে থর, লোকি বা তাদের বাবা অডিন পর্যন্ত আমদের শিশুদের কাছে কত পরিচিত।
বলিউড বা ভারতীয় টিভি সিরিজের কল্যানে রামায়ন- মহাভারত মিনিমাম অপরিচিত নয় আমাদের নতুন প্রজন্মের কাছে। এর বাইরে সুন্দর বনের বনবিবি, গাজি- কালুর কথা যারা একটু আধটু মিথলজির খোজ- খবর রাখেন তারা হয়ত জানেন। এর বাইরেও যে কত মিথলজি আছে। গ্রাম্য এসব মিথলজি/ পৌরানিক কাহিনী নিয়ে কোন দিন কোন গবেষনা চোখে পড়লো না। অনেক হয়ত বলবেন আছে তো অনেক।
অঞ্চলভিত্তিক কিছু পৌরানিক কাহিনীর উদাহরন টানবেন। তবে আমাদের গ্রামীন জীবনে এক সময় প্রায় প্রতিটি গ্রমেই এরকম এক বা একধিক মিথলজি ছিল। যেগুলো অনেকগুলোই হয়ত কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে। উদাহরন দেই, তাহলে বিষয়টা মনে হয় আরো পরিষ্কার হবে। পঞ্চগড়ের হাফিজাবাদের ঠেকরপাড়া গ্রামের একটা মিথলজি উদাহরন দেই। এই অঞ্চল টা ডুয়াসের জঙ্গলের সাথে কানেকটেড ছিল পাকিস্তান আমল পর্যন্ত। বাঘের আনাগোলা নব্বই দশকের পর আর নেই। তবে এখনো সীমান্তের ওপারের ডুয়ার্স, গরুমারা জঙ্গল থেকে পথ ভুলে নীলগাই আসার খবর পাওয়া যায়।
এই ঠেকরপাড়ায় নব্বই দশক পর্যন্ত একটি পৌরানিক কনটেন্ট মানুষের মধ্যে ছিল। গ্রামের বাইরের দিকে একটা পুরনো পাকুর গাছের গোড়ায় এক গ্রাম্য দেবতার থান ছিল। একদম জগ্রত দেবতা। তবে দেবতার কোন অবয়ব ছিল না। থানের অংশটি নতুন ফসল উঠার সময় বছরে একবার পরিষ্কার করে লেপা – মোছা হলেও। গ্রামের মানুষরা বলতো বর্ষায় মাসের পর মাস লেপা- মোছা না হলেও থানের অংশটিতে ঘাস গজাতো না। সেই আসনে অশরীরি সন্যাসী বসে থাকতো বলে। বছরে একবার নতুন ফসলের সময় সিন্নি দেয়া হতো দেবতার ভোগে। তবে এই গ্রাম্য দেবতার জাগ্রত রুপ প্রকট হলো, গ্রামে কারো গরুর বাছুর হলেই। নতুন বিয়ানো গরুর দুধ দোয়ানো শুরু করার পরই ভেট হিসেবে সামান্য এক ঘটি দুধ ভেট দিতে হতো সন্যাসীর থানে। কেউ ভুলে গেলে বা না দিলে দেখা যেত তার বাছুর হরিয়ে গেছে। ভুল স্বীকার করে থানে ভেটের মানত করতেই ফিরে আসতো চঞ্চল বাছুর। কি সুন্দর সরল একটা গ্রাম্য মিথ।
অথচ আমার আগে কেউ হয়ত এই মিথ নিয়ে লেখেনি। এমন বাংলাদেশের হাজার হাজার গ্রামের কয়েক হাজার মিথের একটা সংগ্রহ থাকলে কি দারুন একটা ব্যাপার হতো। পশ্চিমে তাদের এমন সব মিথলজি নিয়ে যদি অ্যভেঞ্জারের মত একটার পর একটা দারুন জনপ্রিয় মুভি হতে পারে৷ আমাদের বনবিবি, গাজিকালু, মাকান ঠাকুর নিয়ে কত সমৃদ্ধ এক দেশীয় মিথলজি থাকতো। গল্পের জন্য পুরোপুরি বাইরের মিথলজির উপর ভর করতে হতো না। এসব গ্রাম্য মিথের কাহিনী কিন্তু অ্যাভটার বা অ্যাভেঞ্জারের চেয়ে কম আকর্ষনীয় নয়।