অতীত খুঁড়ে খুঁজে ফিরি আমার ইতিহাস
সেলিনা মওলা
একটি আটচালা টিনের ঘর বানাবো।
যার মেঝে হবে মাটির,
আর অর্ধেক মাটির দেয়াল,
অর্ধেক মুলিবাঁশের।
মাথার উপরেও থাকবে সারি সারি মুলিবাঁশ ।
সামনে দুটো বারান্দা
একটি উচুঁতে
একটি নিঁচুতে।
মাটির সিঁড়ি থাকবে সামনে আর একধারে
অন্যধারে থাকবে মাটির অর্ধেক দেয়াল।
যে নিঁচু বারান্দায় দাদাজান একটি চৌকিতে শুয়ে থাকতেন ঠিক তেমনি একটি চৌকি থাকবে।
চৌকিতে শীতলপাটি বিছানো থাকবে
আর শীতে থাকবে ফুলতোলা চাদরে মোড়া একটি তোষক।
দু”তিনটে বালিশও থাকবে ফুলতোলা কভারে মোড়ানো।
দাদিজানের শাড়ি দিয়ে বানানো তুলতুলে
নকশা করা কাঁথা থাকবে একটি।
উফফ, দাদিজান,,,
অন্ধকার ঘুটঘুটে রাতে মায়ের হাতের নিচে
তোমার ঘাড়টা শক্ত হয়ে গেল।
বাড়ির সব কাপড় নষ্ট হলো—
মায়ের কোলের শিশুটিকে আর তোমাকে সামলাতে সামলাতে রাত ভয়ঙ্কর হলো।
জীবনের শেষ শ্বাসটুকু নিলে তোমরা দুজন সেই রাতে।
একরাতেই কয়েকবাড়িতে খোঁড়া হলো কয়েকটি কবর।
মা কিভাবে তোমার শাড়ি আগলে রাখবে?
তবুও আমি কোনো এক অমাবস্যার রাতে
ওই চৌকিতে শোবো।
উঠোনে জোনাকির হুলুস্থুল ব্যস্ততা
হাস্নোহেনার সাপপাগল সুবাস
কামিনীর নস্টালজিয়া।
রান্নাঘর থেকে গরম ভাতের মৌ মৌ গন্ধ,
কাঠাল গাছের ফাঁকে জ্বলজ্বলে সন্ধ্যাতারা,,,
দুরে কোথাও ডাহুকের অকারণ কেঁদে ওঠা,
চিত্রায় ছলাৎ ছলাৎ বেপারীর নাও,
আর চারদিকে আমার পুর্বপুরুষদের গায়ের স্বর্গীয় সুগন্ধ—
আমাকে আচ্ছন্ন করে,
আচ্ছন্ন করে
আত্মস্থ করে,,,
অতীত খুঁড়ে খুঁজে ফিরি আমার ইতিহাস।