Homeগল্পঅনুর সংসার - ইমোশনাল থ্রিলার গল্প

অনুর সংসার – ইমোশনাল থ্রিলার গল্প

পর্বঃ ০১

একটা থ্রিলার ইমোশনাল গল্প। লেখাটা যদি ভালো লাগে তাহলে কমেন্ট করবেন প্লিজ । পরের পর্ব লিখবো।
——————–
অনু নামের একটি মেয়ের বাড়িতে কিছু লোকজন এসেছে তাদের ছেলে রবিনের সঙ্গে বিয়ের কথা পাকা দিতে। অনু আর রবিনকে দেখে মনে হচ্ছে ওরা দুইজনেই এই বিয়ে নিয়ে খুব খুশি। দুই পরিবারের সম্মতিতেই ওদের বিয়ে হয়ে যায়। ওরা সংসার করতে শুরু করে। অনু একদিন রবিনের কাছে একটা সেলাই মেশিন চায় রোজগার করবে বলে। কিন্তু রবিন বলে অনুর সব দায়িত্ব রবিনের, অনুর রোজগার করার কোন দরকার নেই। অনুর নতুন সংসার একদম স্বপ্নের মতো চলছে। যেরকম সংসার সব মেয়েরাই চেয়ে থাকে। রবিন অনুকে খুবই ভালোবাসে,খুবই আগলে রাখে।
রবিন একজন পুলিশ ইন্সপেক্টর। লোকাল থানায় নতুন সার্কেল ইন্সপেক্টর হয়ে এসেছে রবিন। অনু একদিন রবিনের থানায় জন‍্য লা‍‍ঞ্চ নিয়ে যায়, অনুকে থানায় দেখে রবিন খুব খুশি হয়ে যায়। রবিনের একজন সহকর্মী ইকবাল স‍্যার বলেন এতোদিন উনি থানায় আছেন কিন্তু কোনদিন কারো স্ত্রীকে কারো জন‍্য খাবার আনতে দেখেননি, রবিন খুবই লাকি। সেদিন রাতে রবিন অনুর জন‍্য ওর পছন্দের সেলাই মেশিন নিয়ে আসে। সাভাবিক ভাবে অনু সেলাই মেশিনটা দেখে খুবই খুশি হয়। রবিনের আন্ডারে সাব- ইন্সপেক্টর দিবাকর রবিনকে বলেন, ওদের ডিআইজি অফিসার হটাৎ হটাৎ করে সারপ্রাইজ ইন্সপেকসন করতে আসেন। রবিনের আগে যে সার্কল ইন্সপেক্টর ছিলেন, তিনি একদিন ওনার পার্সোনাল একটা কাজে বাইরে গিয়েছিলেন।আর ঠিক সেই সময় ডিআইজি ইন্সপেক্শনে আসেন, উনি এসে দেখেন রুম খোলা, FIR কপি গুলো ঠিক করে অর্গানাইজ করা নাই। এমনকি এটাও লক্ষ করেন যে একজন অফিসার ক্লিনসেভ করে আসেনি। উনি সেদিন সার্কেল ইন্সপেক্টরের ফেরার অপেক্ষা করেন। CI ফিরলে উনি নিজ হাতে সাস্পেনসন লেটার ধরিয়ে দেন। মানে যা বোঝা গেল তাতে রবিনের উপরেও যথেষ্ট চাপ আছে। কারণ রবিন এখন এখানকার CI,( সার্কেল অফিসার )। রবিন ঠিক করে যে,ঐ এলাকার সেপটির জন‍্য প্রতিরাতে একজন করে ভলান্টিয়ার পেট্রোলিং করবে।
আর এই প্রজেক্টের নাম হবে নেইবার হুট সেভিয়ার। এলাকা থেকেই ভলান্টিয়ারদের নেওয়া হবে। রবিন বলে যে সে ডিআইজির থেকে পারমিসান নিয়ে নিবে।
এদিকে অনু সেলাই মেসিন পেয়ে ভিষন খুশি। সেলাই করতে করতে গল্প করছিল। সেই প্রতিবেশি মহিলা বলেন যে তোমার স্বামী তোমাকে খুবই ভালোবাসে। তুমি একবার বলা মাত্রই তোমাকে এতো দামি একটা সেলাই মেসিন কিনে দিল। অনুও তাতে সম্মতি জানালো। কারণ সত্যিই অনু তার স্বামী আর সংসার নিয়ে ভীষণ খুশি ছিল।
এভাবে কেটে যায় আরও কিছুদিন।অনু নোটিশ করে রবিন কেমন বদলে যাচ্ছে। অনুর সঙ্গে খারাপ আচরণ করছে, কথায় কথায় রেগে যাচ্ছে। আবার সেই প্রতিবেশি আসলো অনুর সঙ্গে গল্প করতে।এমন সময় রবিন অনুকে ফোন করে। রবিনের ফোন পেয়ে অনুও খুশি হয়ে ফোন রিসিভ করে। কিন্তু রবিনের কথাগুলো অনুকে খুব অবাক করে দেয়। রবিন খুব রেগে বলে কোন নরকে পরে আছো তুমি, আমি লাঞ্চের জন‍্য অপেক্ষা করছি। কোথায় তুমি? অনু হটাৎ করে অপ্রস্তুত হয়ে যায়। অনু বলে আমি তো বাড়িতে। বাইরের লোকের কাছে পরিস্থিতিটা ম‍্যানেজ করার জন‍্য অনু বলে যে আসলে আজ আমার লাঞ্চ বানাতে দেরী হয়ে গেছে। আমি এক্ষুনি যাচ্ছি। অনু তারাহুরো করে রবিনের জন‍্য খাবার নিয়ে আসে। অনু খাবার বাড়তে শুরু করলে রবিন বলে যে তোমার কি সত্যিই খাবার বানাতে দেরী হয়ে গিয়েছিলে, নাকি তুমি ভুলেই গিয়েছিলে আমার জন‍্য খাবার আনতে হবে? নাকি তুমি মনেই করোনা যে আমার জন‍্য খাবার বানানোটা তোমার রেস্পসিবিলিটি। সত্যিটা বলো।
অনু ভয়ে ভয়ে বলে আসলে আমি জানতাম না যে, আজ আমার তোমার জন‍্য খাবার নিয়ে আসার কথা। এটা শুনে তো রবিন রেগে পুরো ফায়ার হয়ে যায়। রবিন বলে তোমার দয়ার খাবার আমি চাই না।
অনু রবিনকে অনেক রিকুয়েস্ট করে খেয়ে নেওয়ার জন‍্য। কিন্তু রবিন অনুর কোন কথাই শোনেন না। উল্টো রবিন অনেক খারাপ খারাপ কথা বলেন অনুকে।
অনু সত্যিই বুঝতে পারছে না রবিনে কি হয়েছে। হটাৎ এরকম ব‍্যবহার কেন করছে সে।
রবিন অনুকে বলে সে যেন দশ মিনিট অপেক্ষা করে বাইরে যায়। না হলে সবাই অন‍্যরকম ভাববে। রবিনের ব‍্যবহারে অনু তো প্রায় হতবাক হয়ে যায়। বাধ্য হয়ে রবিনের কথামতো দশ মিনিট অপেক্ষা করে ওখান থেকে চলে যায়। রাতে রবিন বাড়ি ফিরলে অনু তারাতারি করে খাবার বারে। কিন্তু রবিন না খেয়ে চলে যায়। রাতে অনু রবিনের রাগ ভাঙাতে একটু কাছে যাওয়ার চেষ্টা করলে রবিন চিৎকার করে বলে উঠে তোমার জন‍্য কি একটু শান্তিতে ঘুমাতেও পারবো না। আমার কাছে আসার একদম চেষ্টা করবে না। রবিনের ব‍্যবহারে অনুর স্বপ্নের মতো সংসারের দিন গুলো কেমন যেন উলট-পালোট হয়ে যেতে থাকে। চোখের জলের সাথে অনুর মনটাও ঝাপসা হতে থাকে। রবিনের নেইবার হুট প্রোজেক্ট খুব ভালো ভাবে ইমপ্লিমেন্ট হওয়ার কারনে ডিআইজি রবিনের উপর খুব খুশি হয়। তার এই আইডিয়ার জন‍্য। রবিনের এই সাফল্যে সেলিব্রেট করার জন‍্য রবিনের সার্কেলের ইন্সপেক্টররা একটা ছোট ঘরোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সেখানে সবাই যখন রবিনকে ড্রিংকস করতে বলে।
রবিন প্রথমে না করলেও পরে রবিন অনুর দিকে তাকিয়ে বলেন ম‍্যাডাম অনুমতি দিলে তবে খাবো। অনু একটু অবাক হয়ে যায় রবিনের এই কথা শুনে। অনু বলে এ বাবা আমি কেন বারন করবো। রবিনও অন‍্য সবাই ড্রিংকস করতে শুরু করে। নানারকম কথা বার্তা চলছিল তার মাঝেই রবিন হটাৎ করে বলে উঠে যে, সবাই কতো লাকি, তাদের স্ত্রীরা তাদের কত ভালোবাসে আর আমার কপাল আমি ওতো ভাগ‍্য করে আসিনি। সবাই বলে না স‍্যার এটা আপনি ঠিক বলছেন না। ম‍্যাডাম আপনাকে কতো ভালোবাসে। প্রতিদিন আপনার জন‍্য খাবার নিয়ে আসে। রবিন বলে আরে তোমরা কিছুই জানো না, ওটা শুধু ওয়ান টাইম জিনিস ছিল। তারপরের দিনেই উনি আমার খাবার আনতে জাষ্ট ভুলেই যান। তাকে ফোন করে রিতিমতো ভিক্ষা করে আমাকে খাবার চাইতে হয়েছে। হটাৎ করে রবিনের এই ধরনের কথায় অনু ভীষন অপমানিত বোধ করে। ওখান থেকে বের হওয়ার পর মাঝ রাস্তায় ভীষণ বৃষ্টি শুরু হওয়ায় ওরা একটা জায়গায় নেমে দাড়ায়। অনুর গম্ভীর মুখ দেখে রবিন জিগ্যেস করে যে কি হয়েছে?
অনু বলে কি হয়েছে তুমি জানো না। সবার সামনে তুমি আমাকে ঐভাবে অপমান করলে কেন? রবিন খুব ক‍্যাজুয়ালি বলে আরে ওটা ইয়ার্কি ছিল। তুমি ওটাকে সিরিয়াসলি নিচ্ছো কেন।
অনু বলে ওটা ইয়ার্কি ছিল না রবিন। আমি সারাদিন তোমার জন‍্য এতো কিছু করি, অথচ তুমি যেভাবে সবার সামনে বললে তাতে মনে হলো আমি কিছুই করিনা তোমার জন‍্য। কি ভাবলো সবাই আমাকে?
রবিন বলে প্রথমত কে কি ভাবলো তাতে আমার কিছুই যায় আসে না। দ্বিতীয়ত তুমি যেভাবে বলছো তাতে মনে হচ্ছে এই শহরের বেস্ট বৌ তুমি। যে স্বামীর এতো সেবা করে। অনু বলে আমি সেটা বলিনি। কিন্তু আমি কি তোমার জন‍্য কিছুই করিনা। আর আমাকে কে কি ভাবলো তাতে তোমার কিছুই যায় আসে না। অনু বলে তুমি কখনও জানতে চেয়েছো আমি খেয়েছি কি না। রবিন এটা শুনে রেগে গিয়ে বাইক স্টার্ড দিয়ে বলে তুমি গাড়িতে উঠবে নাকি হেঁটে বাড়িতে ফিরবে?
অনু বলে আমার প্রশ্নের উত্তর দাও। রবিন বলে ওকে তাহলে তুমি হেটেই বাড়ি ফিরো। এই বলে রবিন অনুকে ঐ বৃষ্টির রাতে একা ফেলে বাইক নিয়ে চলে যায়। অনু হতোবাগ হয়ে যায় রবিনের এই ব‍্যবহারে। অনু একটা অটো নিয়ে বাড়িতে ফিরে।
কোন অনুতাপের বদলে রবিন অনুকে বলে আশা করি তুমি তোমার শিক্ষা পেয়ে গেছো। ভবিষ্যতে এরকম করলে তোমাকে আর বাড়িতেই ঢুকতে দিবো না। এটা মনে রেখো।
অনুও রেগে গিয়ে বলে ভবিষ্যতে এরকম হলে আমি আর বাড়িতেই ফিরবো না। অনুর পুরো কথাটা শোনার আগেই রবিন তার হাতে থাকা পানির গ্লাস টা দেয়ালে ছুরে মারে। অনু পুরো সক্ট হয়ে যায়। মুহুর্তেই রবিন বুঝতে পারে যে সে অন‍্যায় করেছে।
নিজের ভুল বুঝতে পেরে রবিন অনুর কাছে ক্ষমা চায়।
রবিন অনুকে বলে যে সে অনুকে ছাড়া থাকতে পারবে না। সেটা কি অনু জানে না। অনু বাড়িতে ফিরবেনা শুনেই তো রবিন নিজের রাগকে কন্ট্রোল করতে পারেনি।
অনু আর কোন কথা বলে না। একদম চুপ হয়ে যায়। মনে মনে রবিনকে মেলাতে পারে না।
এভাবেই কেটে যায় আরও কিছু দিন। একদিন অনুর বাবা আর মা অনুর বাড়িতে বেড়াতে আসেন।
রবিন ওদের সঙ্গে খুব ভালো ব‍্যবহার করেন। রবিন অফিস থেকে ফিরে অনুর বাবার হাতে দুই লাখ টাকার একটা চেক লিখে দিয়ে বলেন আমি জানি আমাদের বিয়ের জন‍্য আপনার অনেক টাকা লোন নিয়েছেন। আমার তরফ থেকে প্লিজ এইটুকু আপনি রাখুন। অনুর বাবা টাকাটা নিতে অনিচ্ছা দেখাতেই রবিন বলে আমি যদি আপনার ছেলে হতাম তাহলে কি ফিরিয়ে দিতে পারতেন। অনু যেমন আপনার মেয়ে, আমি তো আপনার ছেলের মতো তাইনা। ছেলে কি বাবার বিপদে পাশে থাকবে না। তারপরও যখন অনুর বাবা চেক নিতে রাজি হয় না। রবিন তখন অনুকে বলে বাবাকে রাজি করাও। অনু অবাক হয়ে রবিন কে দেখছে। হটাৎ রবিনের এই ভালো ব‍্যবহার দেখে অনু বুঝতে পারছে না, কোনটা অনুর আসল রূপ, আর কোন টা নকল।
কিন্তু সেই মুহূর্তে বাবা আর মায়ের সামনে কিছু বলার না থাকায়, অনু ওর বাবাকে চেকটা নিয়ে নিতে বলে।
রবিন বলে বাজার থেকে একটা ভালো দেখে মাছ নিয়ে আসি। আজকে আপনাদের জন‍্য একটা স্পেশাল মেনু হবে। সবাই মিলে জমিয়ে খাবো। রবিন বাজার থেকে ফিরে বাইরে মাছ কাটছিল, এমন সময় ফিসফিসানির শব্দ পেয়ে রবিন ঘরের বাইরে লুকিয়ে শুনে যে, অনু কেদেঁ কেদেঁ ওর মাকে বলছে তোমরা এতো তারাতারি আমার বিয়ে কেন দিলে? আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। আমি চাইলেও তোমাদের দেখতে পারিনা। তোমাদের এতো তারাতারি আমার বিয়ে দেওয়া উচিৎ হয়নি। অনুর মা শান্ত ভাবে অনুকে বোঝায় যে, এরকম হয়, আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে এটাই জীবন। অনু আসল সত্যিটা বলতে পারে না যে রবিন তার সাথে কত খারাপ ব‍্যবহার করছে। বাইরে থেকে সব শুনে রবিন কল তলায় যেতেই রবিনে পায়ে লেগে বালতিটা পরে যায়। সেই শব্দে অনু আর ওর মা বাইরে বের হয়ে আসেন। অনু মা এসে বলে এ বাবা এসব তুমি কেন করছো দাও আমি করে দিচ্ছি। রবিন বলে না না আমি পারবো। রবিন অনুর দিকে রাগের দৃষ্টিতে তাকায়। রবিন সব শুনতে পেরেছে বুঝতে পেরে অনু একটু ভয় পেয়ে যায়। ডাইনিং টেবিলে খাওয়ার সময় রবিনের রাগ রাগ ভাব দেখে খাওয়া শেষ হলে অনু রবিন কে বলে তুমি কি আমার উপর রেগে আছো? রবিন বলে তুমি জানোনা আমি সোফায় বসে খেতে ভালোবাসি।

তাহলে সেটা তুমি ওদের বলোনি কেন? অনু বলে ওরা তোমার সঙ্গে একসাথে বসে খেতে চেয়েছিল। তাই আমি কিছু বলিনি। রবিন বলে এটা আমার বাড়ি না ওনাদের। এখানে আমার ইচ্ছে না খেটে কি তোমার আর তোমার বাবা মায়ের ইচ্ছে খাটবে?
অনু বলে এই ছোট ব‍্যাপার নিয়ে এতো সিনক্রিয়েট কেন করছো। এটা তো একদিনের ব‍্যাপার। রবিন রেগে গিয়ে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যেতে চায়, অনু রবিন কে বলে এভাবে বেড়িয়ে যেওনা। এটা দেখতে ভিষন খারাপ লাগবে। আমার বাবা মা অন্তত এটা যেনে বাড়ি ফিরুক যে আমি খুব সুখে আছি। এটা শুনে রবিন আরও রেগে যায়। রবিন বলে তার মানে তুমি আমার সাথে খুশি নেই তাইতো। তাহলে এখুনি ওদের সঙ্গে চলে যাও।আমি বাড়ি ফিরে তোমাদের কাউকেই দেখতে চাইনা। এই বলে রবিন বাইক স্টার্ট দিতে যাচ্ছিল, তখনই অনু রবিনকে আটকানোর জন‍্য বাইকের চাবিটা কেড়ে নেয়। রবিন অনুর এই কাজে ভিষণ রেগে গিয়ে একটা থাপ্পর মেরে দেয়।
হুম এটাই বাকী ছিল। অনু ভীষন রেগে গিয়ে ওখান থেকে চলে যেতে গেলে রবিন নিজের ভুল বুঝতে পেরে অনুকে মানানোর চেষ্টা করে। অনুর কাছে ক্ষমা চায়।
একে অঙ্গে কত রূপ। কোনটা আসল আর কোনটা অভিনয় বোঝা মুশকিল। অনু আয়নায় দেখে যে তার গালে থাপ্পড়ের দাগ বসে গেছে। মা বাবা আর বাইরের লোকের কাছে এটা লুকাতে অনু কাদঁতে কাদঁতে গালে ফাউন্ডেশন লাগিয়ে দাগটা লুকানোর চেষ্টা করে।
এরপর অনু রবিন আর ওর বাবা মা বাইরে ঘুরতে যায়। রবিন আর অনুর বাবা একটু দুরে গেলে অনুর মা বলে যে, তোকে নিয়ে আমার খুবই চিন্তা ছিল যে তুই ভালো আছিস কি না, রবিন তোকে ভালো রেখেছে কি না? কিন্তু এখানে এসে রবিন কে দেখে আমার সব চিন্তা দুর হয়ে গেছে। রবিন সত্যি খুব ভালো মানুষ। অনু রবিনের ব‍্যাপারে এতো ভালো ভালো কথা শুনে আর থাকতে না পেরে তার মাকে বলে যে রবিন আজ আমাকে থাপ্পড় মেরেছে। অনুর মা খুব অবাক হয়ে বলে কেন? তুই কি করেছিস? অনু বলে তুমি আগেই কেন ধরে নিলে? আমি কিছু করেছি।
অনুর মা বলে কারণ রবিন একজন ভালো মানুষ। ও বিনা কারণে নিশ্চয়ই তোকে মারবে না। তাই যদি হয়, যদি আমি কিছু করেও থাকি, তাহলেও কি আমাকে থাপ্পড় মারার অধিকার চলে আসে ওর। অনুর মা বলে আমি সেটা বলিনি। তুই আমার মুখ থেকে কি শুনতে চাস বল।
অনু বলে আমি জানিনা। মেয়ের এরকম পরিস্থিতিতে মায়ের ঠিক কি বলা উচিৎ।
অনুর মা কিছুক্ষণ চুপচাপ থেকে বলে আমি তোকে সেটা বলতে পারি, যেটা আমার মা আমাকে বলেছিল। যেদিন তোর বাবা প্রথম আমায় মেরেছিল।
অনু অবাক হয়ে গিয়ে বলে বাবা তোমায় মেরেছিল!
অনুর মা বলে জাস্ট একবার। কিন্তু সেই ঘটনা টা আমাকে খুবই কষ্ট দিয়েছিল।
তোর নানু তখন আমাকে বলেছিল যে তুই একমাত্র মেয়ে নও যে এই ঘটনার সম্মুখীন হয়েছো। পুরুষদের রাগ করার অধিকার আছে। তাদেরকে বাইরে যেতে হয়। স্ট্রেসফুল কাজ করতে হয়। অনেক রকম ফ্লাসট্রেসন থাকে তাদের। তা সেই রাগ থেকে তারা এরকম ব‍্যবহার করে ফেলে কিছু সময়। ভালোবাসা পাওয়ার সাথে সাথে তাদের দেওয়া কষ্টটাও আমাদের সহ‍্য করা উচিৎ। একটা বাচ্চা হলে সব ঠিক হয়ে যাবে।
অনু ভাবে তার এখন কি করা উচিৎ। অনুর মা বলেন, এগুলো আমার মা আমাকে বলেছিলেন।
কিন্তু আমি তোকে এই কথা বলবো না। আমি বলবো কারো স্বামী যদি তার গায়ে হাত তোলে, তাহলে তার সঙ্গে আর এক মুহূর্তও থাকা উচিৎ নয়।
অনু তার মাকে জিগ্যেস করে, তাহলে আমার এখন কি করা উচিৎ?
অনুর মা বলে, তো যেটা সঠিক মনে হবে তুই সেটাই করবি। না হলে আজ থেকে কুড়ি বছর পর তুই হয়তো তোর মায়ের নামে তোর মেয়ের কাছে এই ব‍্যপারে অভিযোগ করবি।
মায়ের এই কথা শুনে অনু আর অনুর মা দুইজনেই হেসে ফেলে। কিন্তু অনু বুঝতে পারে না। তার ঠিক কি করা উচিৎ। কারন মধ‍্যবিত্ত বাড়ির মেয়েরা তার শেষ অব্দি চেষ্টা করে তাদের সংসারটাকে বাচানোর। এতো সহজে সংসার ভাঙার কথা মেয়েরা ভাবতে পারে না।

——- চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

উম্মে সামসাদ জেরীন
উম্মে সামসাদ জেরীন
মানুষ ঠিক ততক্ষণ অবধি ভালো থাকতে পারে,যতক্ষণ তার নিজের অনুভূতি নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা অন্য কারো হাতে না যায়।

এই লেখকের আরো লেখা

এই ক্যাটাগরির সর্বাধিক পঠিত

সাম্প্রতিক মন্তব্য