পবনের বেগে দূরান্তে হারিয়ে যাওয়া মেঘের মত অজানা কোন এক কারনে তুমি আজ আমার থেকে এক আলোকবর্ষ দূরে। কৈলাস পর্বতের বুক থেকে প্রবাহিত জলে ভাসতে ভাসতে একদিন তুমি আমার হৃদয়ের করকমলে পদ্ম হয়ে ফুটেছিলে। তোমার সৌন্দর্যে বিমোহিত আমি তোমাতে আমাকে হারিয়েছিলাম।
সেদিন, বাহারী মেঘের বুকে বজ্রের আলো যে ঝলকানি দিয়ে গেছিলো তা থেকে তর তর করে নেমে আসে বিষম বাদলে তোমার বিষন্নতা দূরীভূত হয়েছিল। দাবদাহের প্রখরতার মাঝে দখিন দিক বেয়ে নেমে আসা মিহি লোমের রেখার মত ঝিরিঝিরি পবন তোমার সমস্ত শরীর বেয়ে নেমে এসেছিল। ক্ষিপ্রতার গায়ে গায়ে সুন্দরের পরশ তার । তুমি ঠিক প্রকৃতির মত বৈচিত্র্যময় । প্রতিকূলতায় ক্ষত ও হাহাকারের সাগর বুকে প্রকৃতি যেমন সমস্ত ঝড়-ঝাপটা সয়ে যায়, সাঁতরানো মাছগুলোর মত দিব্যি ভেসে থাকতে পারো, সমস্ত বেদনার বিষাদসিন্ধু খারিজ করে।
পুরো এক পৃথিবীর দূঃখ বহন করে তুমি নিশ্চুপ শুনশান রাতের নীরবতার মত চুপ থাকতে পারো। অসহ্য যন্ত্রণার কাতর হয়েও চিৎকারকে অর্থহীন করে তুলতে পারো। কিছু চিৎকার শব্দহীন অথচ বিকট। উচ্চমাত্রার ভূমিকম্পের মত এতীব্র ঝাঁকুনি দিয়ে কিংবা প্রকম্পিত হয়েও তুমি পূর্বের অবস্থানে স্বাভাবিকতায় ফিরতে পারে নিঃসংশয়ে। দূঃখের তীব্র গতিতে তোমার দেহে লাল রাত্রি নামে অবনীপাড়ের মতো।
কতশত বিশেষন আর সর্বনামের ভিড়ে তোমার প্রকৃত সত্তা উদঘাটনে আমি বার বার ব্যর্থ হই। তুমি অশ্রুসিক্ত লোনা জলে সমস্ত দূঃখ ধুয়েমুছে সুচি হতে পারো।
আমাদের প্রথম দেখা পৃথিবীটা ঠিক এমনটা ছিল না। এত হানাহানি বিদ্বেষ, স্বার্থপরতা, অনিশ্চয়তার ডামাডোল। আমরা সবকিছুই বদলে যেতে দেখলাম, অনেক কিছু বিস্মৃত হলো বুঝলাম, তা থেকে আমাদের অনেক বোধোদয় হলোও কিন্তু সমস্ত পরিবর্তনকে তুমি ধরাশায়ী করে ফেললে। তুমি বললে পরিবর্তনই এই জগতের একমাত্র ধ্রুব সত্য। আমি শুনলাম কিন্তু মানতে পারলাম না।
আচ্ছা! জগত সংসারের কটা মানুষ আদৌ সুখী বলতে পারো! এই যে, চাওয়া পাওয়ার চাপে, প্রাপ্তি অপ্রাপ্তির টানাটানিতে কারো মনে সুখ নেই, কারো দেহে সুখ নেই, কারো ঘরে সুখ নেই। অধরা সুখপাখিকে ধরতে হয়রান সবগুলো মানুষ যেন সারি বেঁধে আছে। অনেকেই তাঁরা আত্মাহীন দেহ অবয়বে। আজ তুমি কোনটাতেই নেই তবু কেন আমার এ বিরহ বাগিচায় তোমার নামে দূঃখ ফুল ফোটে, অশ্রুবৃষ্টির ঝর্ণা নামে।
আজও স্মরণে সেসব দিন গুণে আমার দিবস অতিক্রান্ত হয়, তোমার মন ছুঁয়ে আমি বেঁচে থাকি আবার তোমার দেহ ছুঁয়ে আমার মরণ হয়। তোমার অলৌকিক অস্থির চঞ্চু আমার হৃদয়াঙ্গম করে এক চিলতে মেঘের মতোন, তোমার রাতের আঁধারের মত কেশ, তোমার বিরহ পরশে আমার অসরতার মাঝে উদ্দীপনা খেলা করে। তোমার দৃঢ় আলিঙ্গন আমার শূন্য হিয়ায় নতুন স্পন্দন সঞ্চার করে। তুমি নেই অথচ সবকিছুতেই তোমার থাকা। তুমি সমস্ত বিরহ বেদনার অনলে শীতলতার ছায়াসঙ্গী। তোমার থাকা না থাকার মাঝে আমি চির মোহমন্দি।
তুমিহীন তুমিময়~
ভালো লেগেছে।